হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়
প্রিয় পাঠক আপনারা প্রশ্ন করেছেন হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় ও কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারবেন, হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় ও কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। তাহলে চলুন নিচে দেখে নেওয়া যাক, হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়
ভূমিকা
প্রতিবছর হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অনেকেই সারা বছর ধরেই হাঁপানির সমস্যায় ভোগেন আবার এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা ঋতু পরিবর্তনের সময় হাঁপানি সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে যে সময়ই হোক না কেন হাঁপানির সমস্যা হলে রোগীদের বেশ কষ্ট উপভোগ করতে হয়। আজ আপনাদের জানাবো হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। এবং সেই সাথে আপনারা জানবেন কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে নিচের অংশে জেনে নেওয়া যাক, হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে সম্পর্কে।
হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
হাঁপানি হলো একটি ফুসফুসজনিত রোগ, হাঁপানি সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। অনেক সময় এই হাঁপানি সমস্যা তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। মূলত ফুসফুসে বায়ু প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ার ফলেই হাঁপানির আক্রমণ ঘটে থাকে। হাঁপানি সমস্যা এমন একটি সমস্যা যার কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই, এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যেমন- আবহাওয়া, খাদ্য, নির্দিষ্ট কোন ঔষধের কারণে বা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা, বায়ুদূষণ, শ্বাসযন্ত্র সংক্রমণ, ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেই হয়ে থাকে। আপনারা যারা হাঁপানি সমস্যায় ভুগছেন তাদের হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এর মধ্যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।
লেবুঃ আপনারা জানেন লেবু ভিটামিন-সি যুক্ত একটি ফল। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং সেই সাথে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। হাঁপানির সমস্যা দূর করতে নিয়মিতভাবে ১ গ্লাস পানির মধ্যে লেবুর রস, সেই সাথে কিছুটা চিনি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি আপনার হাঁপানির সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আদাঃ আদার রস শুধুমাত্র হাঁপানি রোগ নয় এর পাশাপাশি কাশি, সর্দি, জ্বর এসব ধরনের রোগের জন্য খুবই উপকারী। আর তাই নিয়মিতভাবে আদার রস খাওয়ার অভ্যাস রাখুন, এর জন্য এক টুকরো আদা পানির মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে সেই পানি খেয়ে নিন। এটি অনেক উপকারী হবে আপনার জন্য, এক্ষেত্রে আপনি চাইলে আদা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন।
মধুঃ মধু হাঁপানি নিরাময়ের জন্য অন্যতম, বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিতভাবে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে ১ চামচ মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে খেয়ে নিলে হাঁপানি সমস্যা দূর হয়ে যায়। এমনকি এটি সর্দি, কাশিতেও বেশ উপকারী। আর তাই চিরতরে হাঁপানি দূর করতে হলে নিয়মিতভাবে ১ চামচ মধুর সাথে দারুচিনি গুড়ো মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস এখন থেকে শুরু করে দিন। খুব তাড়াতাড়ি হাঁপানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
ইনহেলড কটিকোস্টেরয়েড ইনহেলারঃ হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হিসেবে আপনি ইনহেলড কটিকোস্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কুইক রিলিফ ইনহেলারঃ এ ছাড়াও আপনি চিরতরে হাঁপানি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসেবে কুইক রিলিফ ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ ইনহেলার হাঁপানি রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে চিরতরে আপনার হাঁপানির সমস্যা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়
দৈনন্দিন জীবনে ক্ষুধা মিটাতে, সেই সাথে শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। তবে কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই আজ আপনাদের কে জানাবো কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় সে খাবার গুলো সম্পর্কে।
আপেলঃ হাঁপানি রোগ দূর করতে আপেল খুবই কার্যকর, কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং সেই সাথে ম্যাগনেসিয়াম। এ সমস্ত ভিটামিন গুলো হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে, গবেষণায় জানা যায় আপেল হাঁপানির ঝুঁকি কমাতে এবং সেই সাথে ফুসফুসের ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। আর তাই হাঁপানির সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
কলাঃ আমরা জানি কলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, কারণ কলাতে রয়েছে ফাইবার যা একজন সুস্থ মানুষের জন্যও অনেক উপকারি। হাঁপানি রোগীদের জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য, কলাতে থাকা ফাইভার হাঁপানি রোগীদের ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর তাই চিকিৎসকরাও হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিয়মিতভাবে একটি করে কলা খেলে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত হাঁপানির সমস্যা কমে যায়।
পালং শাকঃ পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি শাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ম্যাগনেসিয়াম ও বিটা ক্যারোটিন যা একজন হাঁপানি রোগীর জন্য খুবই উপকারী। আর তাই হাঁপানি রোগ এড়াতে খাদ্য তালিকায় পালং শাক যুক্ত করুন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ একজন হাঁপানি রোগীর জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গুলো অত্যন্ত জরুরী। বেশ কিছু খাবারের এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন- হ্যালিবাট, টুনা, হেরিং। এছাড়াও বেশকিছু সবজিতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন- ব্রকলি, পালং শাক ইত্যাদি খাবার। তাই চেষ্টা করুন এ ধরনের খাবার গুলো বেশি বেশি খেতে।
হাঁপানি রোগীরা কোন কোন খাবার খাবেন না
হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, তবে এমনও বেশ কিছু খাবার রয়েছে একজন হাঁপানি রোগীর জন্য সেগুলো ক্ষতিকর। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক, হাঁপানি রোগীরা কোন কোন খাবার খাবেন না।
দুধঃ আমরা জানি দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য, ক্যালসিয়ামে ভরপুর দুধ সেই সাথে দাঁত এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এই ক্যালসিয়াম। কিন্তু দুধে থাকা প্রোটিন একজন হাঁপানির সমস্যা জনিত ব্যক্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। যখন কোন ব্যক্তির হাঁপানি সমস্যা বৃদ্ধি পায় সে সময়টুকু দুধ খাওয়া উচিত নয়।
ডিমঃ ডিম অত্যন্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার, তবে যখন হাঁপানির সমস্যা বৃদ্ধি পায় সে সময় ডিম খাওয়া উচিত নয়। কারণ ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন আর এই প্রোটিন অ্যালার্জির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। আর অ্যালার্জিজনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই হাঁপানি সমস্যা দেখা দিলে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ধূমপান করাঃ ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন, সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানির সমস্যা কে অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন- ফুসফুস ও শ্বাসনালী সংক্রান্ত নানারকম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ধূমপান। আর তাই হাঁপানি সমস্যা দূর করতে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
কিছু সবজিঃ বেশ কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, রসুন, পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের ভাজা খাবার, মটরশুটি ইত্যাদি। এ সমস্ত খাবারগুলো ডায়াফ্রামের উপর চাপ সৃষ্টি করে, এর ফলে হাঁপানি সমস্যাগুলো বাড়িয়ে দেয়। আর তাই এ ধরনের খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়ঃ উপসংহার
হাঁপানি সমস্যায় প্রতিবছর অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে, আর এই সমস্যা সারা বছরেই যেকোনো সময় হয়ে থাকে। কারো কারো খুব বেশি ঘন ঘন সমস্যায় পড়তে হয়, আবার কারো কারো আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সমস্যা হয়। হাঁপানি সমস্যা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে উপরের দেখানো পদ্ধতি অবলম্বন করে চলুন, এটি আপনার জন্য খুব উপকারী হবে।
আজ আপনারা জেনেছেন, হাঁপানি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়, কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় ও হাঁপানি রোগীরা কোন কোন খাবার খাবেন না সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আমাদের ওয়েবসাইটে নিত্যনতুন আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়, আপনারা যারা নিত্যনতুন আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী তারা আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমাদের সাথে এতক্ষন থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আসসালামু-আলাইকুম।
Comments
Post a Comment